কোনো জাতি যদি তাদের সঠিক ইতিহাস জানতে না পারে তাহলে সেই জাতির পতন শুরু হয়। এই নীতিকে কাজে লাগিয়েই ইংরেজরা ভারতীয়দেরকে আসল ইতিহাস পড়া থেকে বঞ্চিত করেছিল। রামায়ণ মহাভারতের কাহিনীগুলিকে শিক্ষা ব্যাবস্থা থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল এবং গুরুকুল পদ্ধতিকে সরিয়ে মেকেল শিক্ষাপদ্ধতি চালু করা হয়েছিল।
যার পরিণাম এই যে, বর্তমানে এমন অনেক যুবক যুবতী রয়েছে যারা ভারতের রামায়ণ মহাভারতের ইতিহাসকে কাল্পনিক বলে মনে করে। দুঃখের বিষয় এই যে, আজকের দিন দাঁড়িয়েও ভারতের পাঠ্যবইতে সঠিক ইতিহাস স্থান পাইনি। আজও ভারতের যেকোনো ইতিহাস পাঠ্যবইতে বহিরাগত মুঘলদের চরণবন্দনা করা হয় এবং হিন্দু রাজাদের বীরত্ব ও মহানতাকে গোপন করা হয়।
লজ্জার বিষয় যে, ভারতের ইতিহাস পাঠ্যবইতে বর্বর হিংসা প্রবন মুঘলদের সম্রাট বলে সম্বোধন করা হয়। অন্যদিকে ভারতের যেসব রাজারা মুঘলদের তাড়িয়ে ভারতীয়দের দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্ত করার জন্য বহু ত্যাগ করেছেন তাদের ইতিহাসের পাতায় খুঁজেও পাওয়া যায় না। এমনই এক হিন্দু রাজা ছিলেন পেশোয়া মাধব রাও প্রথম (Madhavrao Peshwa I )।
১৭৬১ সালে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের পর মারাঠা শক্তির ব্যাপক হ্রাস হয়েছিল। মারাঠা সাম্রাজ্যের এমন কোনো পরিবার ছিল না যারা পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে আপনজনকে হারায়নি। কিন্তু এরপরেও এমন এক রাজা ছিলেন যিনি নিজের বাহুবলে ভারত বিরোধী শক্তিগুলিকে পদতলে কুচলে দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মাধবরাও প্রথম, যিনি মাত্র ১১ বছরের শাসনকালে মারাঠা শক্তিকে চরম শিখরে নিয়ে গেছিলেন।
শাসন ক্ষমতায় বসার পরেই মাধব রাও প্রথম বিরোধী শক্তিগুলিকে চূর্ণবিচূর্ণ করতে মাঠে নেমে পড়েন। মাত্র ২ বছরের মাথায় উনি হায়দ্রাবাদের নিজামকে হারিয়ে দেন। এরপর ১৭৬৪ সালে দক্ষিণ ভারতের আরো শক্তি হায়দার আলীকে পরাজিত করেন। মাধব রাও এর নেতৃত্বে মারাঠা সেনা অপরাজেয় হয়ে উঠে। শত্রুপক্ষের জন্য মারাঠা সেনা বারুদলিপ্ত বজ্রবহ্নিবন্দিত যন্ত্রে পরিণত হয়।
মারাঠা সেনার একের পর এক দুর্জয় কার্যকলাপের শত্রুপক্ষের কাছে ভয়ালরূপে আত্মপ্রকাশ করে। ব্যাঙ্গালোর থেকে ৬০ থেকে কিমি দূরে নিজাগাল কেল্লা জয়ের জন্য মারাঠা সেনা হায়দার আলীর সেনার উপর যে তান্ডব চালিয়ে ছিল তা আজও স্থানীয়দের মুখে শোনা যায়। শুধু এই নয়, পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে উত্তরভারতের যেসব রাজপুত, জাঠ রাজরা মারাঠা শক্তির বিপরীতে মুঘলদের পাশে ছিল তাদেরকেউ কুচলে দেন মাধব রাও প্রথম। দিল্লীর মুঘলদের টক্কর দিয়ে নিজের অধীনে শাহ আলমকে নিযুক্ত করেন এবং মারাঠা শক্তির অধীনস্ত করেন।
সেই সময়কালেই ইংরেজরা পূর্বভারতের মতো পশ্চিমভারতেও ধীরে ধীরে কবজা করার পরিকল্পনা করেছিল। তবে হিন্দু মারাঠা শক্তির সক্রিয়তার জন্য ইংরেজরা সেনা স্থাপন করতে ব্যার্থ হয়। উত্তর থেকে দক্ষিণ ভারত সর্বত্র প্রভাব বিস্তার করেন মাধব রাও প্রথম, যার দরুন এই সময়কালকে মারাঠা শক্তির পুনরুত্থানের সময়কাল বলে আখ্যা দেওয়া হয়। ১৮ নভেম্বর ১৭৭২ সালে অসুস্থতার দরুণ উনার মৃত্যু হয়। উনার মৃত্যুকে মারাঠা শক্তির জন্য সবথেকে বড়ো ক্ষতি বলে ধরা হাপি।
from India Rag https://ift.tt/3hRfiDw
Bengali News