শিল্পশহর দুর্গাপুরে বিদ্যুতের জোগান দিতে রাজ্য সরকার ১৯৬০ সালে ডিপিএল গড়ে তোলে। কিন্তু তা চাহিদা মেটাতে পারছিল না। বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ১৯৬৬ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিভিসি মায়াবাজারে ডিটিপিএস গড়ে তোলে। প্রথম পর্যায়ে দু’টি ৭৫ মেগাওয়াট এবং একটি ১৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিট চালু হয়। ১৯৮২ সালের সেপ্টেম্বরে ২১০ মেগাওয়াটের চতুর্থ ইউনিট চালু করা হয়। কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে ১৯৮৫ সালে প্রথমে দু’টি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়।পরের দিকে তৃতীয় ইউনিটটিও বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। এখন কোনও রকমে চালু আছে চতুর্থ ইউনিটটি। মাস দুয়েকের মধ্যে সেটিও বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা ওই কারখানার কর্মীদের। কারণ, ইউনিটটি চালু রেখে লোকসান হচ্ছে। তা ছাড়া অন্ডালে ডিভিসি-র নতুন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোদমে উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে। এক মাত্র চালু ইউনিটটিও বন্ধ হয়ে গেলে প্রকল্পটিই বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে।ডিভিসি সূত্রের খবর, এ বছর জুনের শেষে কলকাতায় সংস্থার সদর দফতর ‘ডিভিসি টাওয়ার’-এ চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ২৫ বছরের পুরনো ইউনিটগুলিকে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কোনও ভাবে সেই খবর ছড়িয়েই গোটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন ডিটিপিএসের প্রায় ৮০০ স্থায়ী ও ৬০০ অস্থায়ী কর্মী। কর্মীদের আশঙ্কা, স্থায়ীদের হয়তো কোথাও স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু, অস্থায়ী কর্মীরা কাজ হারাবেন। এর সার্বিক প্রভাব পড়বে দুর্গাপুরের অর্থনীতিতে। তাই শুধু কর্মীরাই নয়, প্রকল্পটি বন্ধ করার বিপক্ষে স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী এবং শ্রমিক সংগঠনগুলি।প্রকল্প গুটিয়ে ফেলার কোনও সরকারি নির্দেশিকা আসেনি ঠিকই। তবে একমাত্র চালু ইউনিটটিও বন্ধ হয়ে গেলে দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার স্টেশনের (ডিটিপিএস) আর যে কোনও ভবিষ্যৎ নেই, তার ইঙ্গিত মিলেছে ডিভিসি-র তরফেই। তাই যে কোনও মূল্যে ইউনিটটি চালু থাক, এটাই চাইছেন ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিক-কর্মী থেকে স্থানীয় বাসিন্দা।নভেম্বরের মধ্যে চতুর্থ ইউনিটটি বন্ধ করে ফেলার সিদ্ধান্ত মোটের উপরে পাকা। দুর্গাপুরের মায়াবাজারে গড়ে ওঠা এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিট আগেই বন্ধ করা হয়েছে। ২১০ মেগাওয়াটের চতুর্থ ইউনিটটি টিমটিম করে চালু আছে। ডিভিসি সূত্রের খবর, চলতি বছর ২১ জুন সংস্থার চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু ডব্লিউ কে ল্যাংস্টির উপস্থিতিতে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয় কলকাতায়। সেই সময় ডিভিসি প্রায় ১৪৩০ মেগাওয়াট উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করছিল। তা কমাতে বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা জানানো হয়।
তারই অঙ্গ হিসাবে নভেম্বরের মধ্যে ২৫ বছর পেরোনো ইউনিটগুলিকে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বোকারোর তিনটি, চন্দ্রপুরার একটি এবং ডিটিপিএসের চতুর্থ ইউনিট ছিল সেই তালিকায়। গত ৮ সেপ্টেম্বর বোকারোর দু’টি ও চন্দ্রপুরার একটি ইউনিট বন্ধের নির্দেশিকা জারি করেছে ডিভিসি।
বোকারো ও চন্দ্রপুরায় চালু ইউনিট থাকায় প্রকল্প গুটিয়ে ফেলার আশঙ্কা নেই। কিন্তু, চতুর্থ ইউনিট বন্ধ হলে ডিটিপিএস পুরোপুরি উৎপাদনহীন হয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই প্রকল্পের জমি ও সম্পত্তির তালিকা তৈরি এবং তা পাহারা দেওয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে বলে ডিভিসি সূত্রে খবর। কয়েক কিলোমিটার দূরে, অন্ডালে সংস্থার নতুন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রও পুরোদমে উৎপাদন শুরু করেছে। এই অবস্থায় দুর্গাপুরের ২৫ বছরের পুরনো ইউনিট চালু রাখতে আগ্রহী নন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। ডিটিপিএস গুটিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও ডিভিসি-র এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘চতুর্থ ইউনিটটির উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। তাছাড়া, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে নতুন পরিবেশবিধি চালু হবে। ১৯৮২ সালে চালু হওয়া এই ইউনিটটি সেই বিধি মানতে পারবে না।’’