কলকাতাঃ বাংলায় নির্বাচন মানেই ব্রিগেড। আর সেই ব্রিগেড সমাবেশে লাল-নীল-গেরুয়ার-সবুজের মেলা। নিজের দলের সমর্থনে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাড়ির কাজবাজ ছেড়ে ব্রিগেডের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এই ট্র্যাডিশন বাঙালীদের মধ্যে চলে আসছে। এই ব্রিগেড থেকেই রাজনৈতিক দল গুলো হাজার হাজার প্রতিশ্রুতি করে, কিছুটা পূরণ হয়, আর বেশিটা সেই প্রতিশ্রুতি হিসেবেই পড়ে থাকে। তবুও রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা ব্রিগেড মিস করতে চাননা। তাঁদের কাছে ব্রিগেডে জনসভা একটি উৎসবের মতো।
আর সেই উৎসবে এবার গা ভাসাতে দেখা গেল বছর ৮৫-র এক বৃদ্ধাকে। ওই বৃদ্ধার স্বামী ছিলেন বরাবরই বাম সমর্থক। ২০০৪-০৫ সাল নাগাদ বৃদ্ধার স্বামী সন্তোষকুমার দাস প্রয়াত হন। কিন্তু যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন তিনি স্ত্রী মালা দাসকে নিয়ে ব্রিগেডে হাজির হতেন। স্বামী প্রয়াত হওয়ার পরেও স্ত্রী মালা দাস সেই ট্র্যাডিশন বজায় রেখেছেন। তবে বামেদের ব্রিগেডে না, তিনি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উপস্থিত হয়েছেন রামেদের ব্রিগেডে।
রবিবার নিজের মেয়ে আর নাতিকে নিয়ে দক্ষিণেশ্বরের বাড়ি থেকে হেঁটে ব্রিগেডে গিয়েছেন মালা দাস। সবুজ ফিতে পাড়ের সাদা ধবধবে শাড়ি পরে ভিড়ের মধ্যে হেঁটে চলেছেন মালা দাস। ওনার এই অদম্য ইচ্ছে দেখে ব্রিগেডে যাওয়া বিজেপির কর্মীরা ওনাকে বারবার ঘুরে দেখছেন। মালাদেবীর হাঁটার গতি এতটাই ছিল যে, ওনার মেয়ে আর নাতি ওনার সঙ্গে ঠিক তাল মিলিয়ে উঠতে পারছিল না।
বৃদ্ধা মালা দাস জানান, ‘আমি স্বামীর সঙ্গে বরাবরই ব্রিগেডে আসতাম। এখনও আসছি। রবিবারের শহরে হাঁটতে খুব ভালো লাগে। অনেক কিছু দেখা যায়, শোনা যায়, চেনাও যায়। ব্রিগেডের সভা সব সভার থেকে অনেক আলাদা হয়, তাই এই সভা মিস করিনা। অনেক বয় হয়েছে, তাই হাঁটার মাঝে মাঝে একটু করে জিরিয়ে নিচ্ছি।”
মালাদেবী জানান, স্বামীর পেনশনের টাকা দিয়ে সংসার চলে। মেয়ে আর নাতিকে নিয়ে বেশ সুখেই আছি। মালাদেবীর মেয়ে মুক্তি মান্না জানান। ‘বাবা কখনো ব্রিগেডের সভা বাদ দিতেন না। মাকে নিয়ে তিনি প্রতিবার বামেদের ব্রিগেডে আসতেন। বাবা চলে যাওয়ার পর মা একাই আসতেন ব্রিগেডে। কিন্তু এখন মা আর বামেদের ব্রিগেডে যান না। এখন তিনি বিজেপির ব্রিগেড সভা হলেই আসেন। নচেৎ না।”
বৃদ্ধার নাতি সৌমজিৎ মান্না বলে, ‘দক্ষিণেশ্বর থেকে অনেকটা হাঁটা পথ। হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যথা করছে। কিন্তু দিদাকে দেখে সেই ব্যথা ভুলে যাচ্ছি। দিদা শক্তি জুগিয়েছে বলেই আমি এতটা রাস্তা হেঁটে আসতে পারছি। দিদা আমাকে দোকান থেকে ক্যাডবেরিও কিনে দিয়েছে। এরকম ব্রিগেড যদি বারবার হয়, তাহলে দিদা আমাকে বারবার উপহার দেবে।”
মালাদেবী জানান, সকাল ১০ টা নাগাদ বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে ব্রিগেডের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন ওনারা। ব্রিগেডের মাঠে ঢুকতে প্রায় ১২ টা বেজেছে। তিনি জানান, আমি বাড়িতে রোজ সকাল-সন্ধ্যা হাঁটাহাঁটি করি। আর এই হাঁটাহাঁটি করার জন্যই আমি এখনও সুস্থ। আমি মোদীজিকে দেখার জন্য এখানে এসেছি।
The post দক্ষিণেশ্বর থেকে হনহনিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ব্রিগেডে ৮৫ বছরের বৃদ্ধা, বললেন মোদীকে দেখতে এসেছি first appeared on India Rag .
from India Rag https://ift.tt/3l2BqOg
Bengali News