স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের ইতিহাস পাঠ্যবইগুলিতে এমনভাবে ইতিহাস পরিবেশন করা হয়েছে যা সত্যকে দারুনভাবে আড়াল করে বলো অভিযোগ উঠে। ইতিহাস বইতে বার বার মুঘলদের চরণবন্দনা ও প্রভাবশালী পরিবারগুলির গাথা পড়ানো হয় বলে অভিযোগ উঠে। ভারতের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকগুলিতে আজাদ হিন্দ ফৌজের কাহিনীকে ছোটো করে দেখানো হয় এবং বহু বীরের বীরত্বকে অদেখা করা হয় বলে অভিযোগ উঠে।
এই সব অভিযোগ একেবারে সত্য মনে হয় যখন ইতিহাসের পাতায় শিভাগঙ্গাই রাজ্যের রানী ভেলু নাচিয়ার ও তার সেনাপতি কুয়িলির খোঁজ মেলে না। ইংরেজরা ষড়যন্ত্র করে শিভাগঙ্গাই রাজ্যের রাজাকে হত্যা করেছিল। এরপর থেকেই শুরু হয় রানী ভেলু নাচিয়ারের (Velu Nachiyar) উত্থানের কাহিনী।
রানী ভেলু নাচিয়ার ভারতের ইতিহাসে প্রথম যোদ্ধা যিনি মানব বোমার ব্যাবহার করেছিলেন। ইংরেজদের সর্বনাশ করতে রানী ভেলু নাচিয়ার মানব বোমার ব্যাবহার করেছিলেন এবং ইংরেজ সেনাকে পরাস্ত করেছিলেন। রানী ভেলু নাচিয়ার একমাত্র যোদ্ধা ছিলেন যিনি ইংরেজদের থেকে নিজের রাজ্যকে ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।
রানী ভেলু নাচিয়ারের এই মহান ইতিহাস তৈরির পেছনে জার সবথেকে বড়ো হাত ছিল তিনি হলেন কমান্ডার কুয়িলি (Kuyili)। বলা হয়, রানী ভেলু নাচিয়ার ও কুয়েলির মধ্যে সম্পর্ক ছিল মা ও মেয়ের মতো। রানীকে আক্রমন করার অর্থ ছিল কামান্ডোর কুয়েলির সাহসিকতাকে চ্যালেঞ্জ করা।
নিজের বাহুবল ও যুদ্ধকলাকে কাজে লাগিয়ে কুয়িলি বহুবার রানির প্রাণ রক্ষা করেছিলেন এবং ভিরামাঙ্গাই উপাধি পেয়েছিলেন। যার অর্থ ছিল বীর নারী। শিবগঙ্গাই রাজ্যকে পুনরুদ্ধার করার জন্য রানী ভেলু নাচিয়ারের নেতৃত্বে তৈরি করা হয়েছিল সেনা যার সেনাপতি ছিলেন কুয়েলি। রাজ্যকে বর্বর অসভ্য ইংরেজদের গোলামী থেকে বের করতে কুয়েলি রানিমার নেতৃত্বে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নেয়।
তবে ব্রিটিশদের হারানোর জন্য সবথেকে বড়ো কাজ ছিল তাদের অস্ত্রগার ধ্বংস করা। অস্ত্রগার করা হয়েছিল এক দুর্গকে, যেখানে পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। কুয়েলি রাজ্যকে বাঁচানোর জন্য বিশেষ সেনার নির্মাণ করে। অন্যদিকে নিজেকে মানব বোমা করে ব্রিটিশদের অস্ত্রগার উড়িয়ে দেওয়ার সিধান্ত নেয়।
যেমন সিধান্ত সেই মতো শুরু হয় কাজ। বিজয়া দশমীর দিন কুয়েলি নিজের শরীরে তেল ও ঘি মেখে নিয়ে প্রবেশ করে অস্ত্রগারে। সেখানেই নিজেকে মানব বোমা তৈরি করে তথা নিজের শাড়িতে আগুন লাগিয়ে ছাপিয়ে পরে গোলা বারুদের উপর। যার পরেই নিমেষের মধ্যে কুয়েলির বলিদানের মধ্যে দিয়ে ধ্বংস হয়ে যায় অস্ত্রগার। অন্যদিকে রানিমার সেনা ইংরেজদের উপর আক্রমন হেনে রাজ্যকে পুনরুদ্ধার করেন। লক্ষণীয় রানী ভেলু নাচিয়ার একমাত্র রানি ছিলেন যিনি নিজের রাজ্যকে ইংরেজদের থেকে ছিনিয়ে আনতে পেরেছিলেন। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, ভারতের ইতিহাসে এই মহান বীরাঙ্গনাদের কাহিনীকে লুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে।
from India Rag https://ift.tt/3iM2ui6